ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

চকরিয়া কলেজের ফল বিপর্যয় মেনে নিতে পারছেনা সচেতন মহল “মদন আর নামিস না”

এম.আর. মাহামুদ, চকরিয়াঃ
চকরিয়ার রাক্ষুসে মাতামুহুরী নদীতে ডুবে ৫ জন মেধাবী ছাত্রের করুন মৃত্যুর পর থেকে চকরিয়ার শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সকল শ্রেণীর মানুষ শোকে কাতর। এ শোক কাটিয়ে উঠা কোনদিন সম্ভব নয়। তারপরও আল্লাহর ফায়সালা মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এরিই মধ্যে এইচ.এস.সি পরীক্ষার ফল বিপর্যয় যেন চকরিয়ার অভিভাবক মহলের জন্য “মরার উপর খারার ঘাঁ” এর মত। সারাদেশে সবকটি শিক্ষা বোর্ডে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন চকরিয়ার প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চকরিয়া কলেজের ফল বিপর্যয় কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা এলাকাবাসী। কারণ এ কলেজ থেকে ৭২৬ জন পরিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করে পাশ করেছে মাত্র ১৮৯জন। পাশের হার ২৬ এর কিছু বেশী। যাক, পরীক্ষায় পাশ ফেল থাকবে। অনেক মেধাবী ছাত্রও পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার নজীর বেশুমার। সমস্যা হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী যখন সব বিষয়ে ফেল করে তখন কি মন্তব্য করার থাকে। আমার সিনিয়র সাংবাদিক বন্ধু এ ধরণের সব বিষয়ে অকৃতকার্য ছাত্রদের “গোল্ডেন ফেল” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আলোচিত কলেজটি গত শিক্ষাবর্ষে পাশের হার ছিল ৩৩%। এবার হয়েছে ২৬%, কি চমৎকার!। ১৯৬৮ সালের প্রতিষ্ঠিত কলেজটিকে অতীতে এমন ফল বিপর্যয়ের রেকর্ড নাই। হয়তো কলেজের প্রতিষ্ঠাতারা বেচে থাকলে তারা অনুসুচনা করতেন- কেন এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিক্ষায় অনগ্রসর চকরিয়া-পেকুয়ার দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে চকরিয়ার আলোচিত কিছু ব্যক্তি, যারা এখন বেঁচে নেই, তারা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে চকরিয়া কলেজের ভূমিকা খাট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। এ এলাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীদের পেছনে শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অভিভাবক মহলের কিযে কষ্ট হচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের চিন্তার বিষয় নয়। ফল বিপর্যয়ের জন্য শুধু শিক্ষাক-শিক্ষিকাদের দায়ী করার পক্ষে আমি নয়। বিশেষ করে এসব কলেজে বেশিরভাগ অপেক্ষাকৃত দূর্বল ছাত্ররা ভর্তি হয়ে থাকে। আর মেধাবীরা শহর কেন্দ্রিক উন্নতমানের কলেজ গুলোতে ভর্তি হয়ে থাকে। তবে একটি কথা না বললে হয়না- “উর্বর জমিতে চাষাবাদ করে ভাল ফলন ফলালে কৃষকের সফলতা নয়, তা হচ্ছে উর্বর জমির সফলতা; কিন্তু অনুর্বর জমিতে চাষাবাদ করে ভাল ফলন ফলাতে পারলেই কৃষকের সফলতা”। আগে পড়েছি “তাস্ খেলে কত ছেলে পড়া নষ্ট করে, পরীক্ষা আসিলে পরে চোখের জল ঝরে” এখন সেই যুগ নেই। শিক্ষার্থীরা তাস্ তেমন খেলেনা। ডিজিটাল কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ল্যাপটপ বা এন্ড্রয়েড মোবইলে সামাযিগ যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পাঠ্য বই বিমুক। যার করুন পরিণতি ফলাফল বিপর্যয়। বর্তমান সরকার এ কলেজটিকে জাতীয় করণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরোপুরি জাতীয় করণের সুফল ভোগ করবেন এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে কাঙ্খিত পরিবর্তন না আসলে জাতীয় করণ করেও চকরিয়াবাসীর শিক্ষা ক্ষেত্রে ভাগ্যের পরিবর্তন তেমন আশা করা যায়না। কারণ পাথরে ধান রোপন করলে ফল আশা করা যায় না। এক সময়ের আলোচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চকরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয় করণ করা হলেও কাঙ্খিত কোন পরিবর্তন আসেনি। এই বিদ্যালয়ে সচেতন কোন অভিভাবক তার ছেলেকে ভর্তি করাতে আগ্রহ দেখায়না। পাশাপাশি চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ ও গ্রামার স্কুলে তাদের ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেসব প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করাতে আগ্রহ পোষণ করছে, এর কারণ কি? অতএব, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা তৎপর না হলে ফলাফল বিপর্যয় ঠেকানো যাবে বলে মনে হয়না। শিক্ষা সচেতন অনেকেরই অভিমত চকরিয়ায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত ৫টি কলেজ সম্মানজনক ভাবে ফলাফল করতে পারলেও চকরিয়ার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ফলাফল বিপর্যয় হওয়ার পিছনে কোন কারণ রয়েছে। যার ময়না তদন্ত হওয়া দরকার। সব শেষে “মদন আর নামিস না” বলেই শেষ করছি।

পাঠকের মতামত: